জানা গেছে, সরকার কৃষদের স্বার্থে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে বোরো বীজ সরবরাহ করছে। বিএডিসির ডিলারের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে এ বীজ সরবরাহ করা হয়।
বিএডিসির বীজের মান ভালো ও দামও তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ধানের বাজার দর ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার বোরো আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চড়া দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক তাদের নিজেদের রক্ষিত বীজ ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। আর চাহিদা বেশি থাকার সুযোগে বিএডিসির এক শ্রেণির অসাধু ডিলার বেশি দামে বিক্রি করছেন বীজ। চাষিরা ডিলারের কাছে চাহিদা মতো বোরো বীজ পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে বেশি দামে বীজ কিনছেন অনেকে।
জেলার সদর উপজেলার আতাহার এলাকার কৃষক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, এবার বীজের দাম অনেক। বীজের ডিলারের দোকানে দোকানে বিএডিসির বীজের খোঁজ করেছি কিন্তু পাইনি। অন্য কোম্পানির বীজের দামও বেশি। ১০ কেজির এক প্যাকেট ধান বীজের দাম ৬০০ টাকা বলছে।
একই এলাকার কৃষক আকবর আলী বলেন, ‘আমার ২০ কেজি বোরো বীজের দরকার ছিল কিন্তু চাহিদা মতো বিএডিসির বীজ পাইনি। এ-দোকান ও-দোকান খোঁজ করে বিএডিসির বোরো বীজ ব্রি ধান-২৮ এক প্যাকেট (১০ কেজি) পেয়েছি।’
দাম বেশি নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে বিএডিসির ডিলাররা বলছেন, এ জেলায় চাহিদার চেয়ে অনেক কম বীজ বরাদ্দ দিয়েছে বিএডিসি। আর ধানের দাম বেশি পাওয়ায় বোরো আবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। বিএডিসির বীজের মান ভালো হওয়ায় চাষি পর্যায়ে এর চাহিদা রয়েছে। এতে বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। বরাদ্দ কম পাওয়ায় কৃষকদের চাহিদামতো বীজ সরবরাহ কারা যাচ্ছে না।
শিবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াবাড়ি গোলাপবাজার এলাকার ডিলার রেজাউল দাবি করেন, বেশি দামে বিএডিসির ধান বীজ বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়। বরাদ্দ যে পরিমাণ ছিল তা উত্তোলন করে নিয়ে আসার পর সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করা হয়েছে। এখন আর ধান নেই, এখন কোম্পনির ধান বিক্রি করছি।
তিনি জানান, এখনো বিএডিসি বীজের চাহিদা আছে। কৃষকরা দোকানে এসে ঘুরছে।
নাচোল উপজেলার সিংরোল এলাকার ডিলার মাসুম এন্টার প্রাইজের মালিক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে অল্প পরিমাণে ধান বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিএডিসির ধানের বীজ সংকট আছে। বাংলা জিরা, ব্রি ধান-২৮ এর চাহিদা বেশি। কিন্তু বিএডিসির সরবরাহ নেই।’
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিএডিসির ৬২ জন ডিলার রয়েছে। ডিলারদের এবার মোট প্রায় ১০০ মেট্রিক টন বোরো ধান বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ডিলাররা ইতোমধ্যে গুদাম থেকে উত্তোলন করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো বীজ সংকটের কথা স্বীকার করে বিএডিসির রাজশাহী আঞ্চলিক বীজ বিপণন কেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুর রহমান জানান, এলাকায় বিগত দুই বছরে কি পরিমাণ বীজ বিক্রি হয়েছে তার ওপর নিরূপণ করে কেন্দ্র থেকে ধান বীজের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। গত দুই বছরে বিক্রি কম ছিল বিধায় বরাদ্দ কম দেয়া হয়েছে। এ বছর ধানের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহী হয়েছে। এজন্য বীজের চাহিদা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেলে ডিলারদের সরবরাহ করা হবে।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর এ জন্য বীজের চাহিদা রয়েছে ২ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএডিসির ধান বীজ বরাদ্দ কম হলেও আশঙ্কার কিছু নেই। চাষিরা নিজেরাই নিজেদের উৎপাদিত বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন। এছাড়াও জেলায় ৪৯ জন চাষি বিভিন্ন ধরনের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। যাদের কাছ থেকে চাষিরা বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।’
বিএডিসির এক শ্রেণির অসাধু ডিলারের অতিরিক্ত দামে ধান বীজ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার কৃষদের স্বার্থে প্রতি কেজি বীজে ১০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করছে। সরকারের বরাদ্দ দেয়া এসব বীজ নির্ধারিত দামের বেশি নিয়ে বিক্রির সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’